Monday, April 2, 2018

আমার পাঠানো শুভেচ্ছা কার্ডের ছবি অটিস্টিক শিশুদের আঁকা: প্রধানমন্ত্রী

বিভিন্ন উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে যেসব শুভেচ্ছা কার্ড পাঠানো হয় সেগুলো অটিস্টিক শিশুদের হাতে আঁকা ছবি থেকে তৈরি করা কার্ড বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন উৎসবে মানুষের কাছে আমি যেসব কার্ড পাঠাই, অটিস্টিক শিশুদের আঁকা কার্ড পাঠাই। যার কার্ড নেই তাকে এক লাখ করে টাকাও প্রদান করি, সম্মানি হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্ড সাধারণত ২০ থেকে ২৫ হাজার কপি ছাপানো হয়। এভাবেই আমি কয়েক বছর থেকে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের হাতে আঁকা ছবি দিয়েই শুভেচ্ছা কার্ড বানিয়ে তা পাঠিয়ে আসছি।
১১তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বিষয়ে একসময় আমারও ভালো ধারণা ছিল না। আমার মেয়ে পুতুল এসব বিষয় নিয়ে আমেরিকায় লেখাপড়া করেছে, পুতুল অটিজম নিয়ে কাজ করে।  একবার আমার মেয়ে পুতুলের সঙ্গে গিয়ে দেখলাম- একটা বাচ্চা হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না, ট্রলির মধ্যে শুয়ে আছে। সে মুখ দিয়ে তুলি কামড়ে ধরে ছবি আঁকছে। আমি সে ছবিটা নিলাম।
এ ঘটনার পর থেকেই অটিস্টিক শিশুদের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা কার্ড বানিয়ে আসছেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অটিজম বিষয়ে সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজমের ওপর একটা রেজ্যুলশনও গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী একটা সচেতনতা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোকদের জন্য প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একটা কমপ্লেক্স তৈরি করতে চাই। মৃত্যু পর্যন্ত অটিস্টিক হয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এখানে। সূচনা ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশনও করে দিয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সুযোগ পেলে তারাও দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সুস্থ খেলোয়াররা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে স্বর্ণ নিয়ে আসতে পারে না কিন্তু প্রতিবন্ধী খেলোয়াররা বিদেশ থেকে দেশের জন্য স্বর্ণ জিতে নিয়ে আসে। প্রতিবন্ধী শিশুরা ক্রিকেট থেকে শুরু করে নানারকম খেলাধুলায় পারদর্শী। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা পছন্দের খেলায় দারুণ প্রতিভার সাক্ষর রাখতে পারে। এজন্যই তাদেরকে সবরকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। আমরা সাভারে ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তুলছি। জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণেও তাদের খেলার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এক লাখ ২৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে ভাতা দিচ্ছি। প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে।
খেলাধুলা ছাড়াও সরকারি চাকুরি এবং বিসিএসে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা বরাদ্দ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকুরিতেও তাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের দেশের সুস্থ মানুষদের যেমন আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি, প্রতিবন্ধী, বিশেষ করে অটিজমের শিকারদেরও যেন সেভাবে সবরকম সুযোগ সুবিধা দিতে পারি।
এসময় অটিস্টিক শিশুদের প্রতিভার বিকাশে দেশের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এটা তো তাদের জন্মের দোষ না। আল্লাহ তো মানুষকে বিভিন্নভাবে সৃষ্টি করেন। কাজেই তাদেরকে অবহেলার চোখে দেখা ঠিক না। চাই সমাজের সচেতনতা।
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের প্রতি সমাজকে আরও সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হয়ে আদর-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে অটিস্টিক শিশুদের লুকিয়ে রাখা হতো। সেই লুকানোর মানসিকতাটা এখন আর নেই। শুধু আমাদের দেশে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ ব্যাপারে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সমাজে মূলধারায় আনতে প্রয়োজন ছোটবেলা থেকেই উপযুক্ত সুরক্ষা ও প্রশিক্ষণ। এক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই প্রতিবন্ধীত্ব বা অটিজমের লক্ষণের ব্যাপারে পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু তাদের জন্য এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে যেন তারা সাধারণ ছেলেমেয়েদের সাথে বসে পড়াশোনা করতে পারে।
এর আগে অটিস্টিক বালিকা ইসাবা হাফিজ জানায়, সে অটিস্টিক বলে তাকে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। এ জন্য প্রাথমিক সাময়িকী এবং অষ্টম শ্রেণি সাময়িকী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এখন ইসাবা দশম শ্রেণির বই পড়ছে। সে বলে, আমি জানি না আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব কি না।
পরে প্রধানমন্ত্রী এই বালিকার বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, কেন ইসাবা পরীক্ষা দিতে পারবে না? আমি যখন তার বক্তব্য শুনছিলাম, তখন আমার খুব কষ্ট লাগছিল। তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। সবাই তো এক রকম করে জন্ম নেয় না।

No comments:

Post a Comment

News,Bangla News

I hope to use the greenhouses for gardening stuff when we are finished with the other 'stuff'.  ok, so jersy's are good for milk...